
বুধবার ● ২ জুলাই ২০২৫
প্রচ্ছদ » অনুসন্ধানী » ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নেই : সংকটে শিশু ও দরিদ্র রোগীরা
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নেই : সংকটে শিশু ও দরিদ্র রোগীরা
দেশায়ন ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২১ দিন ধরে নেই জলাতঙ্করোধী টিকা (অ্যান্টি–র্যাবিস ভ্যাকসিন)। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কুকুর, বিড়াল বা শিয়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে আসছেন শতাধিক রোগী। কিন্তু টিকা না থাকায় খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন তারা। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ চড়া দামে বাইরে থেকে টিকা কিনছেন, আবার অনেকেই সেই সামর্থ্য না থাকায় ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি। আক্রান্ত রোগীরা বলছেন, “বিনামূল্যে সরকারি টিকা পাওয়ার কথা, অথচ এখন নিজের টাকায় কিনতেও পাচ্ছি না।”
বুধবার দুপুরে হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের বারান্দায় মেয়েকে কোলে বসিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ইসরাত জাহান। তাঁর নয় বছর বয়সী মেয়ে নুসরাতকে পায়ে বিড়াল কামড়েছে। চোখে জল ধরে রেখে ইসরাত বললেন, “ডাক্তার বলেছেন দুটো টিকা লাগবে। একটা এআরভি, আরেকটা আরআইজি। কিনে আনতে বলছে। দাম পড়ছে দেড় হাজার টাকা। গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাব?”
একই রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দিনমজুর হাবিবুল ইসলামকে। বললেন, “পায়ে কুকুরে কামড়েছে। রক্ত পড়ছে। কিন্তু টিকা নাই। বাইরে বলছে কিনতে, দাম পড়ছে ১ জাচার ৫শ টাকা। এত টাকার টিকা কিনে বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলা ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিনই ৯০ থেকে ১শ জন রোগী জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিতে আসেন এই জেনারেল হাসপাতালে। জেলার আর কোথাও এই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ফলে একমাত্র ভরসার কেন্দ্রেই যখন টিকা থাকে না, তখন রোগীদের বাঁচার আর কোনো উপায় থাকে না।
হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স লুবানা আক্তার বলেন,“প্রতিদিন রোগীরা আসেন, আমরা শুধু বলি ‘টিকা নেই’। কেউ কান্নাকাটি করেন, কেউ রাগ করেন, কেউ আবার গালিগালাজও করেন। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই।”
ঠাকুরগাঁওয়ে কর্মরত একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জলাতঙ্ক টিকা না থাকা মানেই জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত জেলার পাঁচটি উপজেলায় আলাদা টিকা বরাদ্দ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে বর্ষাকালে কুকুর-বিড়াল কামড়ের ঘটনা বেড়ে যায়।”
হাসপাতালের ওষুধ ভান্ডারের স্টোর কিপার মাহবুব রশিদ বলেন,“গত মে মাসে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে আমরা ৫ হাজার এআরভি এবং ১ হাজার আরআইজি টিকার চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পেয়েছি মাত্র ৫শ এআরভি। আর আরআইজি একটাও পাইনি। গত চার-পাঁচ মাস ধরে এই টিকা আসেই না।”
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন,“৮ জুন পর্যন্ত আমাদের হাতে থাকা টিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর নতুন সরবরাহ আসেনি। নতুন করে আবার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত টিকা এসে পৌঁছাবে।”